
বাংলা গানের এক অনন্য কণ্ঠস্বর প্রতুল মুখোপাধ্যায় আর নেই।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) কলকাতার একটি হাসপাতালে ৮২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন এবং হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় অস্ত্রোপচারও হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়।
সংগীতজগতে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের অবদান
প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘আমি বাংলায় গান গাই’ বাংলা সংগীতের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ২০০৬ সালে বিবিসি বাংলার এক শ্রোতা জরিপে এটি সর্বকালের সেরা বাংলা গানের তালিকায় ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছিল। মূল গানটি তার কণ্ঠে জনপ্রিয় হলেও শ্রোতারা মাহমুদুজ্জামান বাবুর গাওয়া সংস্করণটিকে বেশি ভোট দিয়েছিলেন।
প্রতুল মুখোপাধ্যায় কোনো প্রথাগত সংগীত শিক্ষা না নিয়েও অসংখ্য হৃদয় ছুঁয়ে গেছেন। গানের মধ্য দিয়ে তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছেন, কৃষক-শ্রমিকের সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছেন।
শেষ শ্রদ্ধা ও রাষ্ট্রীয় সম্মাননা
- তার মৃত্যুর পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিদায় জানাচ্ছে।
- কলকাতার রবীন্দ্র সদনে তার মরদেহ রাখা হয়, যেখানে হাজারো ভক্ত শেষ শ্রদ্ধা জানান।
- পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীও সেখানে উপস্থিত থেকে শ্রদ্ধা জানান।
- পরে তার মরদেহ দেহদান কার্যক্রমের জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
জীবন ও রাজনৈতিক পথচলা
জন্ম: ১৯৪২ সালে, বরিশাল (তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত, বর্তমানে বাংলাদেশ)
পড়াশোনা ও কর্মজীবন:
- দেশভাগের পর পরিবারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন।
- ব্যাংকে চাকরি করতেন, জীবনযাপন ছিল একেবারে সাদামাটা।
রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা: - বামপন্থী ভাবধারার প্রতি ঘনিষ্ঠ হলেও সরকারের সান্নিধ্যে কখনও আসেননি।
- বরং নকশালপন্থীদের পথসভায় তার গান ছিল প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি।
- সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের কৃষক আন্দোলনের সময় থেকে মমতা ব্যানার্জীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।
সম্মাননা ও স্বীকৃতি
পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে ‘বঙ্গ-বিভূষণ’, ‘সঙ্গীত সম্মান’, ‘সঙ্গীত মহা-সম্মান’, ‘নজরুল স্মৃতি পুরস্কার’ সহ একাধিক সম্মাননায় ভূষিত করেছে।
শেষ বিদায়
প্রতুল মুখোপাধ্যায় দেহদান করে গেছেন, তাই তার কোনো সৎকার হবে না।
বাংলা গান যতদিন থাকবে, ‘আমি বাংলায় গান গাই’ ততদিন বাঙালির হৃদয়ে বাজবে।