বিপদে আল্লাহর ওপর ভরসা ও দোয়ার গুরুত্ব, হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল

মানুষের জীবন সবসময় একই রকম যায় না। কখনো ভালো সময় আসে, আবার কখনো নানা বিপদ-আপদ ও সংকট নেমে আসে। এই কঠিন মুহূর্তগুলোতে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আল্লাহই একমাত্র উদ্ধারকারী ও শান্তি দানকারী।

যেকোনো বিপদের সম্মুখীন হলে নিচের দোয়াটি বেশি বেশি পড়া যেতে পারে। এটি কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের অংশ মিলিয়ে গঠিত একটি দোয়া—

আরবি:
حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ، نِعْمَ الْمَوْلَىٰ وَنِعْمَ النَّصِيرُ

উচ্চারণ:
হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল, নি’মাল মাওলা ওয়া নি’মান নাসির।

অর্থ:
আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই সর্বোত্তম কর্মবিধায়ক, তিনি উত্তম অভিভাবক এবং সর্বোত্তম সাহায্যকারী।

কোরআনে এই দোয়ার প্রাসঙ্গিকতা

এই দোয়ার অংশগুলো কোরআনের বিভিন্ন আয়াত থেকে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে “হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল” অংশটি পাওয়া যায় সুরা আলে ইমরানের ১৭৩ নম্বর আয়াতে—

“যখন লোকেরা ভয় দেখিয়ে বলল, ‘তোমাদের বিরুদ্ধে এক বিশাল বাহিনী প্রস্তুত হয়েছে, তাদের ভয় করো।’ এতে তারা আরও দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে উঠল এবং বলল, ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই সর্বোত্তম কর্মবিধায়ক।’” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৩)

এছাড়া, “নি’মাল মাওলা ওয়া নি’মান নাসির” অংশটি সুরা আনফাল (৪০) ও সুরা হজ (৭৮)-এর আয়াতের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা আল্লাহর প্রশংসাসূচক বর্ণনা প্রদান করে।

হাদিসে এই দোয়ার গুরুত্ব

নবী করিম (সা.) এবং সাহাবিরা বিভিন্ন বিপদ-আপদের সময় এই দোয়া পড়তেন।

  • হজরত ইব্রাহিম (আ.) যখন নমরুদের নির্দেশে আগুনে নিক্ষিপ্ত হন, তখন তিনি এই দোয়া পাঠ করেছিলেন, এবং আল্লাহ তাঁকে আগুন থেকে রক্ষা করেন।
  • রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মুশরিকদের আক্রমণের আশঙ্কার কথা শুনলেন, তখন তিনি হামরাউল আসাদে এই দোয়া পাঠ করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৫৬৩)
  • খন্দকের যুদ্ধে, যখন সাহাবিরা বিশাল শত্রু বাহিনীর মুখোমুখি হন, তখন তারা এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করেন।

এছাড়াও, কিয়ামতের ভয়াবহতা সম্পর্কে শোনার পর সাহাবিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে রাসুল (সা.) তাদের এই দোয়া পাঠ করার পরামর্শ দেন—

আরবি:
حسبُنا اللَّهُ ونعمَ الوَكيلُ على اللَّهِ توَكَّلنا

উচ্চারণ:
হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল— আলাল্লাহি তাওয়াক্কালনা।

অর্থ:
“আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধানকারী। আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম।” (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৩১)

উপসংহার

বিপদে, দুঃশ্চিন্তায় ও জীবনের যেকোনো কঠিন সময়ে এই দোয়া পাঠ করা অত্যন্ত উপকারী। এটি শুধু একটি দোয়া নয়, বরং আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ নির্ভরতার বহিঃপ্রকাশ। যারা কোনো অবিচারের শিকার, অন্যায়ভাবে কারাবন্দি, বা দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তারা এই দোয়া পাঠ করে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তাআলা তাদের রক্ষা করবেন ও শান্তি দান করবেন।

Related Posts

রমজানে মধ্যপ্রাচ্যে বা আরব বিশ্বে ব্যতিক্রমী ৬ ঐতিহ্য

বিশ্বজুড়ে পবিত্র রমজান মাস নানা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়। মুসলমানদের জন্য বিশেষ এই মাসে ধর্মীয় অনুশীলনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে গড়ে উঠেছে নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। মধ্যপ্রাচ্যে রমজানের আমেজ…

বিস্তারিত
রমজানের রোযা: কুরআন ও হাদীসের আলোকে ফযীলত ও গুরুত্ব

রমজান মাস মুসলমানদের জন্য বছরের সবচেয়ে পবিত্র সময়। এই মাসে বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে রোযা পালন করে। কুরআন ও হাদীসে রোযার গুরুত্ব ও ফযীলত বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে, যা…

বিস্তারিত

যদি দেখে না থাকেন

রাজীব: ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি খলনায়ক যিনি ভয়ের চরিত্রে ভালোবাসা অর্জন করেছিলেন

রাজীব: ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি খলনায়ক যিনি ভয়ের চরিত্রে ভালোবাসা অর্জন করেছিলেন

রমজানে মধ্যপ্রাচ্যে বা আরব বিশ্বে ব্যতিক্রমী ৬ ঐতিহ্য

রমজানে মধ্যপ্রাচ্যে বা আরব বিশ্বে ব্যতিক্রমী ৬ ঐতিহ্য

নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসী হামলার শিকার অভিনেত্রী দিতির কন্যা লামিয়া চৌধুরী

নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসী হামলার শিকার অভিনেত্রী দিতির কন্যা লামিয়া চৌধুরী

খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের পাশে স-মিলে আগুন, ফায়ার সার্ভিসের অভিযান চলছে

খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের পাশে স-মিলে আগুন, ফায়ার সার্ভিসের অভিযান চলছে

১০ পেশা যেখানে ডিভোর্সের হার সর্বোচ্চ: ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান

১০ পেশা যেখানে ডিভোর্সের হার সর্বোচ্চ: ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান

রমজানের রোযা: কুরআন ও হাদীসের আলোকে ফযীলত ও গুরুত্ব

রমজানের রোযা: কুরআন ও হাদীসের আলোকে ফযীলত ও গুরুত্ব