
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের কুইন্স ও ব্রঙ্কস বরো এলাকা থেকে স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার অন্তত ২০ জন নথিপত্রহীন অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসি)। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সাব্বির আহমেদ নামের এক বাংলাদেশিও রয়েছেন। ফেডারেল ল এনফোর্সমেন্ট সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার সদরের বাসিন্দা সাব্বির আহমেদ ব্রাজিল হয়ে মেক্সিকো সীমান্ত পেরিয়ে ২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। ২৯ বছর বয়সী এই তরুণ যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের সময় আইসের সদস্যদের সঙ্গে সাদাপোশাকধারী পুলিশ সদস্য ও নিউইয়র্ক পুলিশ দপ্তরের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সাব্বিরের বড় ভাই শামীম আহমেদ জানান, ভোর ছয়টার দিকে জোরে দরজায় ধাক্কা দেওয়া শুরু হয়। ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দিলে একজন সাদাপোশাকধারী পুলিশ ঘরে প্রবেশ করেন। সাব্বির আহমেদের ছবি দেখিয়ে তিনি জানতে চান, কেউ তাঁকে চেনেন কি না? ‘না’ বলতেই আইসের পোশাকধারী তিন-চারজন পুলিশ ঘরে ঢুকে পড়েন। পুরো তিনতলা বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয় এবং সবার পরিচয়পত্র চেক করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর বাড়ির বেসমেন্টে গিয়ে তাঁরা সাব্বিরকে পেয়ে যান।
শামীম আহমেদ বলেন, “বেসমেন্টে ঘুমিয়ে ছিলেন সাব্বির। ঘুম থেকে উঠে তাঁকে যেতে হচ্ছে জেলে, হয়তো ছাড়তে হবে আমেরিকাও।” পরিবারের সদস্যরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন সাব্বির। ২০ দিন আগে তিনি আশ্রয়ের আবেদনের রিসিভ কপি পেয়েছিলেন। আইস কর্মকর্তাদের কাছে পরিচয়পত্র দেখাতে চাইলে তিনি রিসিভ কপি দেখান, কিন্তু তা গ্রহণ করা হয়নি। পরে তাঁকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে পরিবারের সঙ্গে একই বাড়িতে থাকতেন সাব্বির। কাগজপত্র না থাকায় নিয়মিত কাজ করতে না পারলেও খণ্ডকালীন চাকরি করে জীবনযাপন করছিলেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বিচারে নথিপত্রহীন অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আইসের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে সাড়ে তিন হাজারের বেশি নথিপত্রহীন অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেন, “আমরা সব সময় সবাইকে সতর্ক করে বলে আসছি, এই ক্রান্তিকালে যে কেউ দরজা ধাক্কা দিলে খুলবেন না। দরজা না খুললে কোনো বাহিনী দরজা ভেঙে আপনার বাসায় ঢোকার অধিকার রাখে না। সব সময় যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখবেন।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে নথিপত্রহীন অভিবাসীদের ওপর আইসের অভিযান আরও তীব্র হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাব্বির আহমেদের মতো অনেক অভিবাসীর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।