
প্রযুক্তির উৎকর্ষের মধ্যে বেড়ে ওঠা জেনারেশন জেড বা জেন-জি তাদের বৈচিত্র্যময় স্বভাব ও ব্যতিক্রমী পছন্দের জন্য সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। ফ্যাশনের ক্ষেত্রেও তাদের নিজস্বতা ও সৃজনশীলতা প্রতিবছরই নতুন ট্রেন্ড তৈরি করে। ২০২৪ সালেও জেন-জিরা ফ্যাশন জগতে তাদের স্বকীয়তা বজায় রেখেছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, কী কী ট্রেন্ডে মাতিয়েছে তারা এ বছর।
মনোক্রোম ফ্যাশনে জেন-জির প্রাধান্য
এক রঙের পোশাক বা মনোক্রোম ফ্যাশন ছিল জেন-জিদের পছন্দের শীর্ষে। একই রঙের ভিন্ন শেড ব্যবহার করে তৈরি পোশাকে তারা ফুটিয়ে তুলেছে নিজেদের রুচিবোধ। কো-অর্ড পোশাক থেকে শুরু করে সাজসজ্জায়ও মনোক্রোম ফ্যাশনের প্রভাব ছিল লক্ষণীয়। এই ট্রেন্ডের পেছনে মূল কারণ ছিল সিম্পল লুক এবং আরামদায়ক অনুভূতি। রঙের বৈচিত্র্য ছাড়াই জেন-জিরা তাদের বোল্ড ফ্যাশন চয়েস প্রকাশ করেছে।
টি-শার্ট: মতপ্রকাশের ক্যানভাস
গ্রাফিক্যাল টি-শার্ট জেন-জিদের কাছে শুধু পোশাক নয়, বরং মতপ্রকাশের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। শিল্পকর্ম, সামাজিক সচেতনতা, রাজনৈতিক বার্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন উক্তি— সবকিছুই স্থান পেয়েছে টি-শার্টে। এটি তাদের ব্যক্তিত্ব ও পছন্দের প্রতিফলন হিসেবে কাজ করেছে। জেন-জিদের ওয়ার্ডরোবের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে এই টি-শার্ট।
ঢোলা জিনস ও ড্যাড শু: ফিরে এসেছে পুরনো ট্রেন্ড
দুই দশকের বেশি সময় ধরে ফ্যাশন জগতে রাজত্ব করা স্কিনি জিনসের জায়গা দখল করেছে ঢোলা জিনস। জেন-জিরা উনিশ শতকের জনপ্রিয় ব্যাগি বা ঢিলেঢালা জিনসে ফিরে গেছে। আরামদায়ক পোশাকের প্রতি তাদের দুর্বলতা এই ট্রেন্ডকে জনপ্রিয় করেছে। বিশেষজ্ঞরা এটিকে ওভারসাইজ পোশাকের প্রতি আন্দোলনের ফলাফল বলছেন।
এছাড়াও, চাংকি স্নিকার্স বা ড্যাড শু জেন-জিদের ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। এই জুতা যেমন আরামদায়ক, তেমনি ফ্যাশনে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
অফিস পোশাকে বিপ্লব
জেন-জিরা অফিসের চিরায়ত ফরমাল পোশাকের ধারা ভেঙে দিয়েছে। স্যুট, টাই বা টাকড-ইন শার্টের বদলে তারা বেছে নিয়েছে আরামদায়ক পোশাক। শর্টস ও টি-শার্ট এখন তাদের প্রিয় অফিস পোশাক। তাদের মতে, আরামদায়ক পোশাক কাজের গতি বাড়ায়। সেমি-ফরমাল ও ক্যাজুয়াল অফিস ওয়্যারের ট্রেন্ড এ কথারই প্রতিফলন।
ফ্যাশনে মানসিক স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতনতা
জেন-জি ফ্যাশনে মানসিক স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতনতার প্রতিফলন ছিল চোখে পড়ার মতো। তারা ফাস্ট ফ্যাশন ও অতিরিক্ত কাপড় কেনাকে নিরুৎসাহিত করেছে। পরিবেশ বাঁচাতে ইউনিসেক্স পোশাককে জনপ্রিয় করেছে তারা। এছাড়াও, যেসব ব্র্যান্ড মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ইতিবাচক প্রচার চালিয়েছে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দিকে নজর দিয়েছে, সেগুলো ছিল জেন-জিদের পছন্দের শীর্ষে।
জেন-জি: আরাম, ব্যক্তিত্ব ও সচেতনতার প্রতীক
জেনারেশন জেড মানেই আরামের প্রাধান্য, ব্যক্তিত্বের সঠিক প্রকাশ এবং সামাজিক সচেতনতা। ২০২৪ সালের ফ্যাশন ট্রেন্ডেও তাদের এই বৈশিষ্ট্যগুলো পুরোপুরি ফুটে উঠেছে। ফ্যাশনের মাধ্যমে তারা শুধু নিজেদের রুচিই প্রকাশ করেনি, বরং সমাজ ও পরিবেশের প্রতিও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে।
জেন-জির এই ফ্যাশন বিপ্লব আগামী দিনগুলোতেও নতুন নতুন ট্রেন্ড তৈরি করে যাবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।