
ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামের অন্যতম অগ্রনায়ক মহাত্মা গান্ধী। তিনি শান্তি, মুক্তি ও মানবতার প্রতীক। অহিংসার পথে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম করে তিনি ভারতকে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতার মাত্র ছয় মাসের মাথায়, ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি, এক আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান এই মহান নেতা। আজ ফিরে দেখা যাক তাঁর জীবন ও সংগ্রামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
প্রাথমিক জীবন
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর জন্ম ১৮৬৯ সালের ২ অক্টোবর, ব্রিটিশশাসিত ভারতের গুজরাট রাজ্যের পোরবন্দরে। তাঁর বাবা করমচাঁদ গান্ধী পোরবন্দরের রাজদেওয়ান (মুখ্যমন্ত্রী) ছিলেন। মা পুতলিবাই গান্ধী ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক। ছোটবেলা থেকেই মায়ের কাছ থেকে ধর্মীয় সহনশীলতা, নিরামিষ ভোজন ও অহিংসার শিক্ষা পেয়েছিলেন গান্ধী।
১৩ বছর বয়সে কস্তুরবা মাখাঞ্জির সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৮৮৮ সালে আইন পড়তে লন্ডন যান তিনি। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে ১৮৯১ সালে ভারতে ফিরে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু প্রথম মামলাতেই হেরে যাওয়ায় তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যান।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সংগ্রাম
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয় ও কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যের শিকার হন গান্ধী। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে আন্দোলনের পথে নিয়ে যায়। ১৮৯৪ সালে তিনি নাটাল ভারতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন এবং অহিংস আন্দোলন ‘সত্যাগ্রহ’-এর সূচনা করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকাকালেই তাঁর আন্তর্জাতিক পরিচিতি তৈরি হয়।
ভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ
১৯১৫ সালে ভারতে ফিরে আসেন গান্ধী। চম্পারণ, খেদা ও আহমেদাবাদে কৃষক-শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন পরিচালনা করেন। ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সরকারের রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে তিনি অহিংস সত্যাগ্রহের ডাক দেন। এই আইন ব্রিটিশ সরকারকে বিনা বিচারে কাউকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দিয়েছিল।
১৯১৯ সালের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পর গান্ধীর নেতৃত্বে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-২২)। এই আন্দোলন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে নতুন মাত্রা যোগ করে।
আইন অমান্য আন্দোলন ও ভারত ছাড়ো
১৯৩০ সালে গান্ধীর নেতৃত্বে শুরু হয় আইন অমান্য আন্দোলন। এই আন্দোলন ব্রিটিশ শাসনের ভিত নাড়িয়ে দেয়। ১৯৪২ সালে তিনি ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলন’ শুরু করেন, যা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
স্বাধীনতা ও মৃত্যু
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু দেশভাগের পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। গান্ধী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য অনশন শুরু করেন। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি দিল্লির বিড়লা হাউসে এক প্রার্থনাসভায় যাওয়ার সময় নাথুরাম গডসে নামের এক ব্যক্তি তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।
গান্ধীর উত্তরাধিকার
মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যু বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া ফেলে। তাঁর অহিংসার আদর্শ আজও বিশ্বব্যাপী অনুসরণ করা হয়। ২০০৭ সালে জাতিসংঘ তাঁর জন্মদিন ২ অক্টোবরকে ‘আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে।
মহাত্মা গান্ধী শুধু ভারতেরই নন, বিশ্বের শান্তি ও মানবতার প্রতীক। তাঁর জীবন ও আদর্শ আজও কোটি কোটি মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগায়।