
এডিএইচডি (ADHD): লক্ষণ ও করণীয়
এডিএইচডি (অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার) একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে এটি কেবল শিশুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, অনেক প্রাপ্তবয়স্কও এডিএইচডিতে আক্রান্ত হতে পারেন। স্বাভাবিক চঞ্চলতা এবং এডিএইচডি এক নয়। এডিএইচডি আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিশেষ যত্ন ও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
এডিএইচডির লক্ষণ
এডিএইচডির লক্ষণগুলো ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে। নিচে এডিএইচডির কিছু সাধারণ লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:
১. অস্থিরতা ও ছটফট করা: সারাক্ষণ অস্থিরতায় ভোগা এবং এক স্থানে স্থির হয়ে বসে থাকতে না পারা।
২. মনোযোগের অভাব: কোনো কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা, সহজেই বিভ্রান্ত হওয়া।
৩. অগোছালো জীবনযাপন: কাজে বা ব্যক্তিগত জীবনে অগোছালো ভাব থাকা।
৪. একাধিক কাজ একসঙ্গে করা: একটি কাজ শেষ করার আগেই আরেকটি কাজ শুরু করা এবং কোনো কাজ ভালোভাবে শেষ করতে না পারা।
৫. অতিরিক্ত কথা বলা: অন্যের কথা শোনার আগেই নিজের কথা বলে ফেলা।
৬. মেজাজ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা: হুট করে রেগে যাওয়া বা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা।
৭. ভুলে যাওয়া: সহজেই কোনো কিছু ভুলে যাওয়া বা মনে রাখতে না পারা।
৮. নেতিবাচক চিন্তা: অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা এবং সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি সম্পর্কে চিন্তা করা।
৯. সম্পর্কে সমস্যা: ব্যক্তিগত বা পেশাগত সম্পর্ক ভালোভাবে সামলাতে না পারা।
১০. নিয়মকানুন মেনে না চলা: অসাবধানতার কারণে বারবার ভুল করা বা নিয়ম ভঙ্গ করা।
এডিএইচডির কারণ
এডিএইচডির সঠিক কারণ এখনো অজানা। তবে কিছু সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে:
- জেনেটিক কারণ: বংশগতভাবে এডিএইচডি হতে পারে।
- মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা: ডোপামিন ও নোরেপিনেফ্রিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারের অস্বাভাবিকতা।
- পরিবেশগত কারণ: গর্ভাবস্থায় মায়ের ধূমপান, মদ্যপান বা বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শ।
- শৈশবের অভিজ্ঞতা: ছোটবেলায় মা-বাবার যথাযথ মনোযোগ না পাওয়া বা মানসিক আঘাত।
এডিএইচডি চিকিৎসা
এডিএইচডি চিকিৎসার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে:
১. মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: এডিএইচডির লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
২. ওষুধ: মনোযোগ বাড়ানোর ওষুধ (যেমন: মিথাইলফেনিডেট) এবং অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করা হতে পারে।
৩. সাইকোথেরাপি: কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি (CBT) বা অন্যান্য থেরাপি সাহায্য করতে পারে।
৪. জীবনযাত্রায় পরিবর্তন: নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ঘুম এডিএইচডি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৫. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: এডিএইচডি আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম উপকারী হতে পারে।
এডিএইচডি নিয়ে কিছু ভুল ধারণা
- এডিএইচডি শুধু শিশুদের হয়। (প্রাপ্তবয়স্করাও এতে আক্রান্ত হতে পারেন।)
- এডিএইচডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা অলস বা বুদ্ধিহীন। (এটি একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সঠিক চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণ করা যায়।)
- এডিএইচডি শুধু ছেলেদের হয়। (মেয়েরাও এতে আক্রান্ত হতে পারেন, তবে ছেলেদের তুলনায় কম।)
সূত্র: হেলথলাইন
এডিএইচডি একটি জটিল সমস্যা, তবে সঠিক চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।