
তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
বিশ্ব যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দ্রুত বিকাশের পথে এগিয়ে চলছে, তখন অনেকের মনেই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসছে:
১. এজিআই (আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স) কি মানুষের তুলনায় এতটাই উন্নত হবে যে আমরা একেবারেই গুরুত্বহীন হয়ে যাব? ২. যদি এজিআই মানুষের সব কাজ মানুষের চেয়েও ভালোভাবে করতে পারে, তাহলে মানুষ করবেটা কী? ৩. যদি চাকরির কোনো প্রয়োজনই না থাকে, তাহলে মানুষ কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করবে?
এআই ও এজিআইয়ের পার্থক্য
এআই (Artificial Intelligence) মূলত এমন একটি প্রযুক্তি যা নির্দিষ্ট কিছু কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করতে পারে। এর ধারণার উৎস ‘সাইবারনেটিক্স’ নামক এক বিজ্ঞানশাখা, যা ১৯৪৮ সালে রবার্ট উইনার প্রবর্তন করেন। তিনি মনে করতেন, যন্ত্রের মানবিক হয়ে ওঠা বিপদের কারণ নয়, বরং মানুষের যান্ত্রিক হয়ে যাওয়াটাই বড় বিপদ।
বর্তমানের এআই মূলত নির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক। এটি সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হলেও স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। অন্যদিকে, এজিআই (Artificial General Intelligence) এমন এক ব্যবস্থা, যা মানুষের মতো বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ করতে সক্ষম এবং নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখে। এটি শুধু একটি নির্দিষ্ট কাজ নয়, বরং যেকোনো ধরণের কাজ সম্পাদনে দক্ষ হতে পারে।
মানুষের বিশেষ ক্ষমতা
মানুষের কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এখনো ছাড়িয়ে দেয়। যেমন:
- হিসাব-নিকাশ: মানুষের চিন্তার কোনো সীমা নেই। যদিও কম্পিউটার জটিল হিসাব করতে পারে, তবুও মানুষের বুদ্ধিমত্তার তুলনায় তা সীমিত।
- সৃষ্টিশীলতা: মানুষ কাঁচামাল থেকে জটিল যন্ত্র উদ্ভাবন করতে পারে, যা এআই বা এজিআই সরাসরি করতে পারে না।
- নতুন ধারণা সৃষ্টি: মানুষ প্রতিনিয়ত নতুন আইডিয়া তৈরি করে এবং সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করে।
- নির্বাচন ক্ষমতা: মানুষ তার অভিজ্ঞতা থেকে শিখে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যা এজিআই এখনো পুরোপুরি রপ্ত করতে পারেনি।
- মনোযোগ ও উপলব্ধি: মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু বদলানোর ক্ষমতা আছে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নেই।
ভবিষ্যতে কী করণীয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসারকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, বরং সৃষ্টিশীলতার চর্চা করাই ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেমন:
- লেখালেখি, ডিজাইন, মার্কেটিং, ভিডিও নির্মাণ, কোডিং ইত্যাদি দক্ষতা অর্জন করা
- শিখতে শেখার দক্ষতা গড়ে তোলা
- নতুন নতুন উদ্ভাবনের পথে এগিয়ে যাওয়া
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের প্রতিযোগী নয়, বরং এটি একটি টুল যা মানুষের সৃষ্টিশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তাই সৃষ্টিশীল হয়ে উঠুন, দক্ষতা অর্জন করুন, এবং ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন।
সূত্র: মিডিয়াম ডটকম