
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। তবে সরকার এসব সংকট নিরসনে ব্যর্থ হচ্ছে। দ্রুত একটি নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া এ পরিস্থিতির সমাধান সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এই বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে লিখিত পরামর্শ দিয়েছেন। সোমবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি গণমাধ্যমে পরামর্শপত্রের অনুলিপি প্রকাশ করেন।
সামাজিক অস্থিরতা ও সরকারবিরোধী অভিযোগ
বিএনপির পরামর্শপত্রে বলা হয়েছে, দেশে সামাজিক নৈরাজ্য বেড়ে চলেছে, যা জনগণের গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ম্রিয়মাণ করছে। বিএনপি দাবি করেছে, আওয়ামী লীগ দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির ষড়যন্ত্র করছে এবং দেশের বাইরে থেকে শেখ হাসিনা এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছেন। দলটি আরও বলেছে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে তাদের বিচার করা প্রয়োজন।
বিএনপি মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার ছয় মাসেও পলাতক স্বৈরাচার ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এর ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা দেখাচ্ছে, যা সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
অর্থনীতি ও প্রশাসনের অচলাবস্থা
বিএনপি অভিযোগ করেছে, সরকার জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের আশা-ভরসা দিন দিন কমছে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও বিনিয়োগের অভাব সৃষ্টি করছে। নির্বাচিত সরকার না থাকায় উন্নয়নের গতি মন্থর হয়ে পড়েছে এবং দেশ পিছিয়ে পড়ছে।
বিএনপি মনে করে, গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার ও সাংবিধানিক সুরক্ষা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। তারা বলেছে, সরকারের প্রধান কাজ হওয়া উচিত নির্বাচনের আয়োজন করা এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করা। এমন একটি সরকার প্রয়োজন, যা আইনের শাসন ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নের নিশ্চয়তা দেবে।
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও উপদেষ্টা পরিষদের ভূমিকা
বিএনপি অভিযোগ করেছে, বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং উপদেষ্টা পরিষদে এখনো আগের সরকারের সহযোগীরা রয়ে গেছে। তারা এই ব্যক্তিদের দ্রুত অপসারণের আহ্বান জানিয়েছে, না হলে তাদের ষড়যন্ত্রে জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনে শহীদদের আত্মত্যাগ ব্যর্থ হয়ে যাবে।
এছাড়া, বিএনপি দাবি করেছে যে অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছেন, যা জনগণের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। তারা প্রশাসনকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে পারেন বলে বিএনপি আশঙ্কা করছে এবং একে গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক বলে অভিহিত করেছে।
উপসংহার
বিএনপির মতে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনের একমাত্র পথ দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা। তারা একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি, তারা প্রশাসন ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের শুদ্ধিকরণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।