
পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়গুলোর মধ্যে অন্যতম চা ও কফি। এই দুই পানীয়ের কমন উপাদান ক্যাফেইন, যা আমাদের মস্তিষ্ক ও শরীরের নানা কার্যক্রমে ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, কম থেকে পরিমিত (৪০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত) ক্যাফেইন বেশির ভাগ মানুষের জন্য নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এবার জেনে নেওয়া যাক, অতিরিক্ত ক্যাফেইনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো কী কী।
১. অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা
ক্যাফেইন শরীরের তৎপরতা বাড়ায় এবং ক্লান্তি উৎপাদনকারী উপাদান ‘অ্যাডেনোসিন’কে বাধাগ্রস্ত করে। এটি ‘আড্রেনালিন’ হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে দুশ্চিন্তা ও নার্ভাসনেস বেড়ে যেতে পারে। দিনে ১,০০০ মিলিগ্রাম বা তার বেশি ক্যাফেইন গ্রহণে কিছু মানুষের মধ্যে প্যানিক অ্যাটাকের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
২. অনিদ্রা
চা ও কফির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি ঘুম দূর করতে সহায়ক। তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণে ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করলে ঘুম আসতে দেরি হয় এবং পরিপূর্ণ ঘুম হয় না। তাই রাতে ঘুমের সমস্যা এড়াতে ক্যাফেইনের পরিমাণ ও সময় বুঝে গ্রহণ করা উচিত।
৩. হজমজনিত সমস্যা
সকালে খালি পেটে কফি পান অনেকের জন্য হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এটি গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়াতে পারে। ডি-ক্যাফেইন কফিও কিছু ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি করতে পারে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কফি গ্রহণ ডায়রিয়ার কারণও হতে পারে।
৪. পেশির গঠন নষ্ট হওয়া
অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণে শরীরের পেশির ফাইবার ভেঙে রক্তে মিশে যেতে পারে, যা মেডিকেল পরিভাষায় ‘র্যাবডোমাইলোসিস’ নামে পরিচিত। যদিও এটি খুবই বিরল, তবে যারা অতিরিক্ত চা বা কফি পান করেন, তাদের জন্য ঝুঁকি থেকেই যায়।
৫. আসক্তি তৈরি করা
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ক্যাফেইন আমাদের মস্তিষ্কে অনেকটা মাদকের মতো কাজ করে। যদিও এটি তীব্র আসক্তি বা জীবননাশী নয়, তবে ক্যাফেইনের প্রতি নির্ভরতা তৈরি হতে পারে, যা আচরণগত পরিবর্তন আনতে পারে।
৬. উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি
ক্যাফেইন সরাসরি হৃদ্রোগ বা স্ট্রোক সৃষ্টি করে না, তবে এটি শিরা ও ধমনির ওপর প্রভাব ফেলে, যা সাময়িকভাবে রক্তচাপ বাড়াতে পারে। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাদের উচিত ক্যাফেইনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা।
৭. হৃৎকম্পন বেড়ে যাওয়া
ক্যাফেইনের উদ্দীপনাজনিত প্রভাবের কারণে হৃৎকম্পন বেড়ে যেতে পারে। বিশেষত তরুণদের মধ্যে, যারা এনার্জি ড্রিংকস পান করেন, তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। যদি হৃৎকম্পন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি অনুভূত হয়, তবে ক্যাফেইনের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া উচিত।
৮. ক্লান্তি বৃদ্ধি
অনেকেই চা বা কফি পান করে এনার্জি বাড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ শরীরকে দীর্ঘমেয়াদে ক্লান্ত করে তুলতে পারে। তাই ক্যাফেইন গ্রহণে মাত্রা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
৯. ঘন ঘন মূত্রত্যাগ
ক্যাফেইন একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক, যা মূত্রথলির কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে। অনেকেই চা বা কফি পান করার পরপরই ঘন ঘন ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করেন।
সতর্কতা ও পরামর্শ
কম বা সহনীয় মাত্রার ক্যাফেইন আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। তবে অতিরিক্ত গ্রহণ এড়িয়ে চলা উচিত। শরীরের প্রয়োজন বুঝে, সময় ও পরিমাণ বিবেচনা করে ক্যাফেইন গ্রহণ করলে এর উপকারিতা পাওয়া সম্ভব, ক্ষতি নয়।