
কানাডার অভিবাসন, উদ্বাস্তু ও নাগরিকত্ব বিভাগ (আইআরসিসি) প্যারেন্ট অ্যান্ড গ্রান্ডপ্যারেন্টস স্পন্সরশিপ প্রোগ্রাম (পিজিপি) বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। নতুন বছরে এই প্রোগ্রামের আওতায় আর কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না। আইআরসিসি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে যারা পিজিপির জন্য আবেদন করেছিলেন, শুধু তাদের আবেদনপত্র নিয়ে কাজ চলছে। তবে পরিবারের সদস্যদের জন্য সুপার ভিসার সুবিধা এখনও চালু রয়েছে। এই ভিসার আওতায় নিকটাত্মীয়রা এক নাগাড়ে পাঁচ বছর কানাডায় থাকার সুযোগ পাবেন।
অভিবাসনে কড়াকড়ি
কানাডা সরকার অভিবাসনের সংখ্যা কমাতে কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে। চলতি বছর আইআরসিসি স্থায়ী বসবাসের (পিআর) সুবিধা ২০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে পিজিপি প্রোগ্রামের ওপর। আগের আবেদনের ভিত্তিতে ২০২৪ সালে পিজিপি প্রোগ্রামের আওতায় সাড়ে ২৪ হাজার মানুষকে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সম্প্রতি জানিয়েছেন, দেশটি অভিবাসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে চায়। টরন্টোভিত্তিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই কঠোর নীতির ফলে ২০২৫ সালের মধ্যে পিআর প্রোগ্রামের বাইরে থাকা প্রায় ১২ লাখ অস্থায়ী বিদেশিকে দেশত্যাগ করতে হতে পারে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আইআরসিসি আগামী বছরগুলোতে পিআর সুবিধা আরও কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২৪ সালে পিআর সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৯৫ হাজার, যা আগামী বছর কমিয়ে তিন লাখ ৮০ হাজার এবং ২০২৭ সালে তিন লাখ ৬৫ হাজারে নামিয়ে আনা হবে। চলতি বছর ৯৪ হাজার ৫০০ পারিবারিক ভিসা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে ৭০ হাজার ভিসা স্থায়ী বাসিন্দাদের স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য বরাদ্দ থাকবে।
বাংলাদেশিদের জন্য চ্যালেঞ্জ
কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা এই নতুন নীতির কারণে চাপের মুখে রয়েছেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ দাশ জয় (৩৫) গত পাঁচ বছর ধরে কানাডার একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করছেন। তিনি জানান, পিআর পেতে সরকার নির্ধারিত পয়েন্ট অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়েছে, যা অনেক বাংলাদেশির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
কানাডায় প্রায় এক দশক ধরে ব্যবসা করছেন সালাহউদ্দিন বাচ্চু (৩৭)। তিনি বলেন, আগে নিজ খরচে পরিবারকে কানাডায় নিয়ে আসা সহজ ছিল, কিন্তু এখন এই প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর হাজারো মানুষ পিজিপির জন্য আবেদন করলেও সুযোগ পাচ্ছেন মাত্র কয়েকজন।
কানাডায় বাংলাদেশি সম্প্রদায়
কানাডার অটোয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে এক লাখের বেশি বাংলাদেশি স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। গত দুই দশকে কানাডায় বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে নতুন নীতির কারণে অনেকের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।
কানাডা সরকারের এই সিদ্ধান্ত অভিবাসনপ্রত্যাশী ব্যক্তিদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশেষ করে যারা পরিবারকে কানাডায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছিলেন, তাদের জন্য এই নীতি হতাশাজনক।