
গাজীপুরের টঙ্গী: শীতের রাত, সময় সাড়ে ১২টা। গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অবস্থিত বিশ্ব ইজতেমা মাঠজুড়ে চলছে মুসল্লিদের ব্যাপক সমাগম। মাঠের প্রায় প্রতিটি প্রবেশপথেই দেখা গেছে মুসল্লিদের ভিড়। বাস, ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান থেকে নামছেন তাঁরা। প্রায় সবার হাতেই রয়েছে নানান ব্যাগ ও গাঁট্টিবোঁচকা। মাঠজুড়ে নক্ষত্রের মতো ছড়িয়ে থাকা বৈদ্যুতিক বাতির নিচে দল বেঁধে প্রবেশ করছেন মুসল্লিরা। প্রবেশ করেই নিজ নিজ খিত্তায় (নির্ধারিত জায়গা) অবস্থান নিচ্ছেন তাঁরা।
গতকাল বুধবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে মুসল্লিদের এ সমাগম। আগামীকাল শুক্রবার থেকে শুরু হবে তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম বা মাওলানা জোবায়ের অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপ। এ উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকেই মাঠে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা। তবে রাতেই তাঁদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। মাওলানা জোবায়েরের অনুসারী ও ইজতেমা আয়োজকেরা জানান, এবার ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে দুই ধাপে। প্রথম ধাপে ৩১ জানুয়ারি (শুক্রবার) থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অংশ নেবেন ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মুসল্লিরা। দ্বিতীয় ধাপে ৩–৫ ফেব্রুয়ারি অংশ নেবেন ২২ জেলা ও ঢাকার অন্য অংশের মুসল্লিরা। দুই ধাপের আখেরি মোনাজাত হবে যথাক্রমে ২ ও ৫ ফেব্রুয়ারি।
ইজতেমার গণমাধ্যম সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, ‘আমাদের সাথি ভাইয়েরা গতকাল সকাল থেকেই ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। তবে গতকাল রাতে সাথিরা সবচেয়ে বেশি আসেন। আজ বৃহস্পতিবারও সারা দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা আসবেন। এর মধ্যেই মাঠের বেশির ভাগ অংশ ভরে গেছে।’
গতকাল রাত ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের কোথাও কোথাও এখনো চলছে আনুষঙ্গিক প্রস্তুতির কাজ। মাঠ ঘিরে মুসল্লিদের আনাগোনা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে মাঠে প্রবেশের ফটকগুলোতে মুসল্লিদের ভিড় সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন থেকে মাঠের আশপাশে এসে নামছেন তাঁরা।
মাঠে বিদেশি খিত্তা–সংলগ্ন ফটকে কথা হয় সিলেটের মৌলভীবাজার থেকে আগত কয়েকজন মুসল্লির সঙ্গে। এর মধ্যে মোজাম্মেল হোসেন নামের একজন বলেন, তাঁরা ৪২ জনের একটি দল একসঙ্গে এসেছেন। গতকাল বেলা ১টার দিকে সিলেট থেকে রওনা দিয়ে রাত ১২টায় টঙ্গীতে পৌঁছান। মোজাম্মেল বলেন, ‘প্রতিবছরই ইজতেমা শুরুর এক–দুই দিন আগে মাঠে চলে আসি। তা না হলে জায়গা পাওয়া যায় না। তা ছাড়া জায়গা প্রস্তুতিরও অনেক কাজ থাকে। সেসব মাঠে এসে নিজেদেরই করতে হয়। এক বছর পর সবার সঙ্গে দেখা হওয়ার আনন্দই অন্য রকম।’
তাবলিগ জামাত সূত্রে জানা যায়, তাবলিগ জামাত এখন দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগে শুরায়ে নেজাম বা মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা। অন্য ভাগে আছেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীরা। এর মধ্যে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের ইজতেমা আগামী ১৪–১৬ ফেব্রুয়ারি পালনের কথা রয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। মুসল্লিদের সুবিধার্থে মাঠে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।